বিবরণ লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
৮ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ: যে ধরনের লেখায় কোনো স্থান, বন্ধু, প্রাণী, স্থাপনা, ঘটনা, ছবি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা দেওয়া হয় তাকে বিবরণমূলক লেখা বলে। সাধারণত বিবরণের শুরুতে বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। বিবরণমূলক লেখা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- ছবির বিবরণ, ঘটনার বিবরণ, স্থানের বিবরণ ইতাদি।
বিবরণ লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ
Class 8 Bangla Page 103 to 105 – ৮ম শ্রেণির বাংলা পৃষ্ঠা ১০৩ থেকে ১০৫ সমাধান
কাজ-৫.১.১ ছবি দেখে বিবরণ লিখি: নিচে কয়েকটি ছবি দেওয়া হলো। ছবিগুলো ভালোভাবে দেখো। এরপর ‘আমার বাংলা খাতা’য় ছবির বিষয়, চিত্রশিল্পী-চিত্রগ্রাহকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং দর্শক হিসেবে তোমার প্রতিক্রিয়া নিয়ে ১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণ প্রস্তুত করো। বিবরণের শুরুতে একটি শিরোনাম দাও। নিজের কাজ শেষে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
কাজের ধরন: দলগত।
উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু অনুযায়ী বিবরণমূলক লেখা প্রস্তুত করার দক্ষতা বৃদ্ধি করে তোলা।
উপকরণ: পাঠ্যবই, খাতা, সাদা কাগজ, কলম প্রভৃতি।
কাজের ধারা:
ক। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণে প্রথমে সহপাঠীরা মিলে কয়েকটি দল গঠন কর।
খ। দলের ছাত্রছাত্রীরা আলোচনা করে কারা কোন নমুনা উত্তরটি তৈরি করবে তা ঠিক করে নেবে।
গ। ছবি দেখে ছবির দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে লেখার চেষ্টা করবে।
ঘ। নমুনা উত্তরের জন্য প্রয়োজনে অভিভাবক, এলাকার ব্যক্তিবর্গের মতামত নাও।
ছবি-১

নমুনা উত্তর:
শিরোনাম: দেশমাতৃকা রক্ষায় নারী/বীরাঙ্গনাদের অবদান।
ছবির বিষয়: এটি একটি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি। এই ছবিতে মূলত মুক্তিযোদ্ধা একদল নারীর সারিবদ্ধ মিছিলের বিষয়টি উঠে এসেছে।
চিত্রগ্রাহকের দৃষ্টিভঙ্গি: চিত্রগ্রাহক এই ছবিটি ধারণ করেছেন মূলত যুদ্ধের সময় নারীদের অবদানের বিষয়টি ধারণ করে রাখার জন্য যেন পরবর্তী প্রজন্ম নারীদের অবদানের চিত্রটি দেখতে পারে।
দর্শক হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া: চিত্রে দেখতে পাচ্ছি, একদল সাহসী নারীযোদ্ধা কাঁধে অস্ত্র এবং হাতে পড়াকা নিয়ে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই যে আমাদের আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ এর নেপথ্যে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মবলিদান। এই দেশকে সমুক্ত করতে শুধু পুরুষরা নয়; নারীরাও জীবন বাজি রেখেছিল। তারাও দিয়েছিল অদম্য সাহসের পরিচয়। এই ছবি দেখে বোঝা যায় যে, আসলে নারীরা অবলা নয়।
প্রয়োজনে তারাও পারে পুরুষের সাথে সমান তালে লড়াই করতে। নারী ও পুরুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার ফলেই এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। এই ছবি দেখে নারীর মনের মধ্যে এক প্রকার শক্তির সঞ্চার হবে। সময়ের প্রয়োজনে তারাও সোচ্চার হওয়ার শক্তি পাবে। অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তারা হবে আপসহীন। শুধু নারীরা নয়, যার প্রতিই অন্যায় করা হোক, তারই উচিত প্রতিবাদ করে নিজের অধিকার আদায় করে নেওয়া।
ছবি-২

নমুনা উত্তর:
শিরোনাম: ফসল মাড়াই।
ছবির বিষয়: গ্রামীণ কৃষকদের ধান কেটে বাড়িতে আনার পরের কাজের ‘একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
চিত্রশিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গি: কৃষকদের সবচেয়ে আনন্দের সময় হলো ফসল কেটে ঘরে আনা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কৃষকদের সেই আনন্দঘন সময়টিকেই মূলত এই চিত্রে তুলে ধরেছেন।
দর্শক হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি। অথচ আমরা অনেকেই সেই কৃষি সম্পর্কে উদাসীন। চিত্রটিতে ধান কেটে বাড়িতে আনার পরে সেই ধান মাড়াই করে ঝেড়ে ঘরে তোলার উপযোগী করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, কৃষকেরা ধান মাড়াইয়ের পর সেই আঁটিগুলো স্তূপাকারে সাজিয়ে রাখছে। পাশেই একটি গ্রামীণ কৃষকবধূ কুলা দিয়ে ধান কেড়ে পরিষ্কার করছে। তার পাশে আরেকজন খড়গুলো রোদে শুকাচ্ছে।
প্রযুক্তির বিকাশের ফলে গ্রামীণ এ সকল কাজ আর দেখাই যয় না। দূরে একজন খেজুরের রস কিংবা কিছুর ভাঁড় নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হলো আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ। সকলে মিলে ধদ মাড়াই করে ঝেড়ে পরিষ্কার করে এবং ঘরে তোলার কাজের যে আনন্দ তা আর এখন নেই। আধুনিক যন্ত্রপাতি গ্রামীণ এসব কাছের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ফলে মানুষও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। একে অপরকে কাজে সাহায্য করার মানসিকতা মানুষের ভেতর থেকে উঠে যাচ্ছে। চিত্রটি আমাদের শিকড়ের কথাগুলোই মূলত মূলত স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না।
ছবি-৩

নমুনা উত্তর:
শিরোনাম: ঢাকা সদরঘাট।
ছবির বিষয়: ছবিটিতে ঢাকা সদরঘাটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
চিত্রগ্রাহকের দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত একটি জায়গা হলো ঢাকার প্রবেশপথ সদরঘাট। মূলত সেই সদরঘাটের চিত্রটিই তুলে ধরতে চেয়েছেন চিত্রগ্রাহক।
দর্শক হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া: ঢাকার সদরঘাটের বাস্ততা দেখে মনে হচ্ছে মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে কতই না দুঃখ-দুর্দশা পার করে। মানুষের জীবিকার অন্যতম কেন্দ্র হলো ঢাকা। সেই ঢাকায় প্রবেশের নানা পথ থাকলেও অন্যতম একটি পথ হলো সদরঘাট। এটি ঢাকায় প্রবেশের প্রধান জলপথ এখানে এই বড়ো বড়ো জাহাজে চড়ে কত মানুষ পরিবার-পরিজন ছেড়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে আসে। কেউ সফল হয় আবার কেউ হারিয়ে যায় ভিড়ের মধ্যে।
এই সদরঘাটের ব্যস্ততা সবচেয়ে বেশি বাড়ে ঈদের সময়ে। জায়গার অভাবে অনেক মানুষ গাদাগাদি করে জাহাজে ওঠে। প্রায় প্রতিবছরই দুই-একটা জাহাজ ডুবির খবর শোনা যায়। এই হলো সেই সদরঘাট যেখানে মানুষ অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে নামে। অনেকে স্বপ্ন পূরণ করতে পারে আবার অনেকে পারে না।
ছবি-৪

নমুনা উত্তর:
শিরোনাম: নদীতীরে নগরায়ণ।
ছবির বিষয়: ছবিটিতে মূলত যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে সেটি হলো নদীতীরে নগরায়নের পাশাপাশি বর্জ্য পদার্থ দ্বারা নদী দূষণ।
চিত্রশিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গি: আধুনিক নগরায়ণ কীভাবে আমাদের পরিবেশকে ধ্বংস করছে সেই বিষয়টি মানুষের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
দর্শক হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া: আধুনিক নগরায়ণের নামে মানুষ পরিবেশ ধ্বংসের খেলায় মত্ত হয়েছে। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, একটি নদী বা জলাশয়ের পাশেই গড়ে উঠেছে নগর। নগরের জৌলুস ঠিকই বোঝা যাচ্ছে কিন্তু নদীর অবস্থা খুবই করুণ। নগরের মানুষের পরিত্যক্ত বর্জ্যের সুপরিকল্পিত নিষ্কাশনের অভাবে সব নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। ফলে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। আমাদের উচিত এই বিষয়গুলো গভীরভাবে চিন্তা করা। শুধু প্রত্যক্ষ উন্নতি নয়, সার্বিক উন্নয়ন করতে পারলে তবেই আমরা বসবাসের জন্য নির্মল বায়ু পাব। অন্যথায় এ পরিবেশ হবে বসবাসের অযোগ্য।
Class 8 Bangla Page 106 – ৮ম শ্রেণির বাংলা পৃষ্ঠা ১০৬ সমাধান
কাজ-৫.১.২ নিজের ভাষায় বিবরণ লিখি: নিচের বিষয়গুলো থেকে যেকোনো একটি বেছে নাও। বিষয়টির উপর ২০০-৩০০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণমূলক রচনা প্রস্তুত করো। লেখাটির একটি শিরোনাম দেবে। কাজ শেষে একে অন্যের লেখা পড়ে দেখো এবং বিবরণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে অন্যের লেখার উপর মতামত দাও।
বিষয় ১: ব্যক্তিগত বা সামাজিক ঘটনা; যেমন- কোথাও ঘুরতে যাওয়া, কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে অংশগ্রহণ করা, বিশেষ কিছু রান্না করা ইত্যাদি।
বিষয় ২: বিদ্যালয়ের কোনো ঘটনা; যেমন- বিদ্যালয়ের প্রথম দিন, বিদ্যালয়ের কোনো বিশেষ ঘটনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
বিষয় ৩: বিশেষ কোনো স্থান বা স্থাপনা; যেমন- শহিদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ, পুরাকীর্তি বা পুরাতন স্থাপনা, নদীর তীর বা সমুদ্রসৈকত ইত্যাদি।
কাজের ধরন: দলগত।
কাজের উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
উপকরণ: পাঠ্যবই, খাতা, সাদা কাগজ, কলম প্রভৃতি।
কাজের ধারা:
ক। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণে প্রথমে সহপাঠীরা মিলে কয়েকটি দল গঠন কর।
খ। দলের ছাত্রছাত্রীরা আলোচনা করে কারা কোন নমুনা উত্তরটি তৈরি করবে তা ঠিক করে নেবে।
গ। বিবরণ লেখার বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিক করে নেবে।
ঘ। নমুনা উত্তরের জন্য প্রয়োজনে অভিভাবক, এলাকার ব্যক্তিবর্গের মতামত নাও।
বিষয়-১ কোথাও ঘুরতে যাওয়া।
ক. ঘুরে এলাম কক্সবাজার
বিশেষ কোনো জায়গায় ভ্রমণ মানেই বিশেষ কিছু স্মৃতি কুড়ানো। এই ভ্রমণ একদিকে যেমন আমাদের হৃদয়কে প্রশান্ত করে অন্যদিকে স্মৃতির পাতায় জমে থাকে দীর্ঘদিন। আমার জীবনে আমি অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছি। তবে এবারের সর্বশেষ ভ্রমণটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কেননা এবারের ভ্রমণটি ছিল ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে করে কক্সবাজার ভ্রমণ।
কক্সবাজার ভ্রমণে আমার বাবা-মা এবং ভাই-বোনও সাথে ছিল। বাবা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। তাই তিনি ভ্রমণে যাত্রার কিছুদিন আগেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন। আমাদের যাত্রা ছিল কক্সবাজার এক্সপ্রেসে চড়ে, যেটি ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে গিয়েছিল। আমাদের ট্রেন মাত্র ১ ঘণ্টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছে যায়। আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলাম, এত অল্প সময়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে গেছি। স্টেশন নেমে আমরা এর পরিবেশ দেখে অনেক খুশি হই। কেননা স্টেশনটি ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি একটি আইকনিক স্টেশন। স্টেশনের অবকাঠামো ও সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে
পরবর্তীতে আমরা সমুদ্রের কাছাকাছি একটি হোটেলে উঠে সেখান থেকে প্রস্তুত হয়ে বিশাল সমুদ্র দেখতে চলে যাই। সমুদ্রের বড়ো বড়ো ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছিল। আমরা সমুদ্রে অনেক মজা করি। সেখানে মুখরোচক অনেক খাবারের দোকান ছিল। আমরা সেখান থেকে চিংড়ি ফ্রাই, কাঁকড়া ফ্রাই প্রভৃতি খাবার খাই। সেখানে আমি ঘোড়াতে চড়েছি। আবার সবাই মিলে অনেক ছবিও তুলেছি। সন্ধ্যার সময় সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটি আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। এভাবে সেখানে তিন দিন অবস্থান করে আমরা ঢাকায় চলে আসি।
কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে অংশগ্রহণ
খ. বৈশাখী মেলায় একদিন
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এই দিনটি বাঙালির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের দিন। এটি বাংলাভাষী মানুষের একটি সর্বজনীন উৎসব। বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে।
পহেলা বৈশাখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এগুলোর মধ্যে বৈশাখী মেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। একজন বাঙালি হিসেবে বৈশাখী মেলা আমার প্রাণের উৎসব। তাই আমরা বন্ধুরা মিলে বৈশাখী মেলায় গিয়ে সারা দিন ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। মেলার দিন সকাল সকাল আমরা তৈরি হয়ে মেলায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলাম। মেলাটি আমাদের পাশের এলাকার একটি সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
কলেজের বিশাল মাঠজুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় বিভিন্ন ধরনের জিনিস বেচা-কেনা হচ্ছিল। মাঠের এককোণে পান্তা-ইলিশের একটি দোকান দেখে আমরা সেখান থেকে পান্তা-ইলিশ খেয়ে নিই। মেলায় ছেলেরা লুঙ্গি-পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা লাল- সাদা শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। শিশুরা নতুন নতুন রং-বেরঙের জামা পরে তাদের অভিভাবকদের সাথে ঘুরছিল। তাদের অনেকের গালে রংতুলিতে ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘শুভ নববর্ষ’ প্রভৃতি লেখা ছিল।
মেলায় অনেক ধরনের খাবারের আয়োজন ছিল। বিভিন্ন দোকানে খই, মিঠাই-মন্ডা, শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, মাটির তৈরি বলস, হাঁড়ি-পাতিল, ছোটোদের রান্নার জিনিসপত্র, মাটির তৈরি বিভিন্ন পশুসহ আরও অনেক জিনিসের দোকান সাজানো ছিল। মেলায় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষের আনাগোনা ছিল। শিশু-কিশোরদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল সার্কাস ও নাগরদোলা,। হস্ত ও মৃৎশিল্পের বিভিন্ন জিনিস মেলায় নিয়ে এসেছে কুটিরশিল্পীরা। তাছাড়া বাঁশের তৈরি অনেক জিনিস মেলায় বেচা-কেনা করতে দেখা যাচ্ছিল। এভাবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা মেলায় ঘুরে বৈশাখী মেলাটি অনেক উপভোগ করি।
বিশেষ কিছু রান্না করা
গ. পাঁচমিশালি সবজি রান্না
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনই প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করতে হয়। সেই খাবারগুলোর কিছু সরাসরি খাওয়া গেলেও অধিকাংশই রান্না করে খেতে হয়। রান্না একটি শিল্প। একে রন্ধনশিল্প বলা হয়। দেশ-জাতি ভেদে এই রান্নার ধরন ও স্বাদ ভিন্নরকম হয়ে থাকে। আমার মায়ের হাতের রান্না অনেক মজা হয়। শীতকালীন সবজি বাজারে এলে মাকে বললাম যে আমি একটি স্বাস্থ্যকর ও বিশেষ রান্না করতে চাই। তখন মা আমাকে অনুমতি দিলে বাজারে গিয়ে আমি প্রয়োজনমতো সবজি কিনে নিলাম। সাথে কিছু ডাল নিয়ে নিলাম।
বাড়িতে এসে সবজিগুলো প্রথমে কেটে নিলাম। সবজির মধ্যে ছিল ফুলকপি, ধুন্দল, বেগুন, ক্যাপসিকাম, টমেটো, লাউ, গাজর, সিম, আলু। সব সবজি কেটে আমি একটি ঝুড়িতে রেখেছিলাম। আর ডালগুলো ধুয়ে একটি বাটিতে রেখে দিলাম। পরে কিছু পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ ধুয়ে কেটে একটি বাটিতে রেখে দিলাম। তারপর একটি পাতিল ধুয়ে রান্না করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম।
প্রথমে একটি পাতিল চুলায় বসিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর পাতিলটি গরম হলে এতে কিছু সয়াবিন তেল দিয়ে দিলাম। তেল গরম হয়ে এলে এতে কেটে রাখা পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে দিলাম। এভাবে কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে এতে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে দিলাম। তারপর দিয়ে দিলাম কিছু হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, গরম মসলার গুঁড়া। এভাবে কিছুক্ষণ নেড়ে দিয়ে এর মধ্যে কাঁচা মরিচ দিয়ে দিলাম ।:- একটু পর ডালগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে কষিয়ে নিলাম।
কিছুক্ষণ কষানোর পর কেটে রাখা সবজিগুলো দিয়ে নেড়ে দিলায়। সব একসাথে মিশ্রণের পর সামান্য একটু পানি দিয়ে ঢেকে দিলাম। এভাবে কিছুক্ষণ রেখে দেওয়ার পর সবজি-ডাল ভালোভাবে মিশ্রিত হওয়ার পর এতে একটু পানি দিয়ে দিলাম। এভাবে রেখে দেওয়ার পর সবজি সিদ্ধ হয়ে গেলে শেষ পর্যায়ে কিছু ধনেপাতা ছিটিয়ে দিলাম। রান্না শেষ হওয়ার পর মাকে দেখালে সে অবাক হয়ে যায়। সে আমার রান্নার অনেক প্রশংসা করে। বাবাও আমার রান্না খেয়ে অনেক প্রশংসা করেন।
বিষয় ২: বিদ্যালয়ের কোনো ঘটনা
ক. বিদ্যালয়ের প্রথম দিন
বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় কাটানো দিনগুলোর মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি সবার জন্য একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দিনটিতে একজন শিক্ষার্থী অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সবার মতো আমার বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন।
বিদ্যালয়ে প্রথম যেদিন যাব এর আগের দিন থেকেই আমার মনে বিভিন্ন বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, খেলার মাঠ, শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব কেমন, হতে পারে সেগুলো ভাবতে ভাবতে রাতে ঘুমাতে যাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে। গোসল-খাওয়া ও দাওয়া সেরে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক পরে বাবার সাথে বিদ্যালয়ে রওয়ানা হলাম। সেখানে পৌছে বাবা প্রথমেই আমাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রধান শিক্ষক আমাকে অনেক আদর করলেন। তারপর আরও কিছু শিক্ষকের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বাবা চলে গেলেন।
বন্ধু হয়ে গেল। তাদের সাথে নানা বিষয়ে গল্প করতে লাগলাম। তারপর ক্লাসের সময় হলে একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ক্লাস শুরু করলেন। তিনি প্রথমে আমাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন তারপর রোল ডাকলেন। আমরা সকলে তার ডাকে উপস্থিতি নিশ্চিত করলাম। তারপর তিনি আমাদের বাংলা বিষয়ে ক্লাস নিলেন। ক্লাসের মাঝখানে তিনি আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তার যথাযথ উত্তর আমি দিতে সক্ষম হই।
এভাবে দুটি ক্লাসের পর বিরতির সময় হলে আমরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে খাওয়া-দাওয়া করি, গল্প করি। এরপর বাকি একটি ক্লাস করে আমি বাড়িতে ফিরে আসি। বাবা আমাকে নিয়ে আসে। বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি এভাবে আমি অনেক উপভোগ করি। এ দিনটির কথা আমার এখনও মনে পড়ে। এ দিনটির অনুভূতি কোনোদিন ভোলার নয়।
খ. বিদ্যালয়ের কোনো বিশেষ ঘটনা
বিদ্যালয় মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় একজন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে কাটাতে হয়। এ সময় তাদের সাথে অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। আমার বিদ্যালয় জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। তবে একটি ঘটনা আমি আজও ভুলতে পারি না। এটি ছিল আমার বিদ্যালয়ের একটি স্মরণীয় ঘটনা।
দিনটি হলো গ্রীষ্মকালের এক প্রচণ্ড রৌদ্রময় দিন। আশেপাশের পরিবেশ ছিল নিরাক পড়া নীরব-নিস্তব্ধ। গাছের পাতার কোনো রকম নড়া-চড়া ছিল না। আমরা ক্লাসে বসা ছিলাম। মাথার উপর পাখা ঘুরলেও এর বাতাস ছিল অনেক গরম। ফলে গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলেন।
ক্লাসের মাঝখানে মেয়েদের একটি টেবিল থেকে হৈ-চৈ শোনা গেল। পরে দেখা গেল একটি মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। তারপর শিক্ষকের নির্দেশে মেয়েটিকে নিয়ে তার মাথায় পানি দেওয়া হয়। তাও তার জ্ঞান ফিরছিল না। তারপর প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পাশাপাশি মেয়েটির অভিভাবকদের বিষয়টি জানানো হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করার পর মেয়েটির জ্ঞান ফেরে।
সেই চিকিৎসক তখন তার বাবাকে বলেন যে, অতিরিক্ত গরমে মেয়েটি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। এ ঘটনায় আমরা চিন্তিত ছিলাম। বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকও চিন্তিত হয়ে পড়েন। সেদিন প্রধান শিক্ষক সকল শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে স্কুলের সময় সকালে এগিয়ে নেন এবং কড়া রোদ ওঠার আগেই ছুটির ঘোষণা দেন।
গ. বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
বিদ্যালয় আমাদের যেমন পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে তেমনই বছরব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও পরিচালনা করে। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং পাশাপাশি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দান করে। আমার বিদ্যালয়ে গত বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে একটি আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় মেয়র। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব আলম এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদমান আহমেদ।
দিনভর অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিবৃন্দ তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে অনেক দেশাত্মবোধক গান গাওয়া হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও স্থানীয় ও আমন্ত্রিত শিল্পীদের পরিবেশনায় একে একে পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, পল্লিগীতি, লালনগীতি, আধুনিক গান প্রভৃতি। এর আগে কবিতা আবৃত্তি এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনোমুগ্ধকর নৃত্যও পরিবেশন করে।
শেষ পর্যায়ে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ নামের একটি বিশেষ পর্ব ছিল যাতে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোখা, রাজাকার, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ আরও বিভিন্ন চরিত্রে সেজে আসে। এভাবে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা ছাড়াই বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। এতে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা আমাদের প্রতিটি মানুষের জন্য অতীব জরুরি।
বিদেশি সংস্কৃতির জাঁতাকলে পড়ে আমাদের বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এখন অনেকটাই স্নান হয়ে গেছে। তাই বাঙালি সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হলে এর সাংস্কৃতিক চর্চা অনেক বেশি প্রয়োজন। আমার বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটিও এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যার প্রতিটি ধাপে ঐতিহ্যময় বাঙালি সংস্কৃতি ফুটে ওঠে।
বিষয় ৩: বিশেষ কোনো স্থান বা স্থাপনা
ক. শহিদ মিনার
বাঙালি জাতির অদম্য সাহসিকতা ও হার না-মানা মানসিকতার এক প্রতীক হলো। শহিদ মিনার। পৃথিবীর একমাত্র জাতি হিসেবে বাঙালিরাই ভাষার জন্য জীবন’ দিয়েছেন। সেই ভাষাশহিদদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছে শহিদ মিনার। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ হলো জাতীয় শহিদ মিনার যা ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহিঃপ্রাঙ্গণে অবস্থিত। প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে এখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
বর্তমানে যে শহিদ মিনার দেখা যায় এটি মূলত ১৯৭২ সালে পুননির্মিত। এর স্থপতি হলেন হামিদুর রহমান। প্রথম যে শহিদ মিনার নির্মিত হয়েছিল তা ছিল অতিদ্রুত এবং নিতান্তই অপরিকল্পিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাতের মধ্যে তা সম্পন্ন করে। শহিদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ওই দিনই। শহিদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া।
মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন। নকশা করেছিলেন বদরুল। আলম; সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। এরপর ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি সকালে ভাষাশহিদ শফিউর রহমানের পিতা শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেই শহিদ মিনার ভেঙে ফেলে। এরপর বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে ১৯৫৭ সালে নতুন নকশা করে পুনরায় শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ন্যস্ত। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ শহিদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান প্রদান করে থাকে। শহিদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মকান্ড পরিচালিত হলেও এটি এখনও অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ছাড়া শহিদ মিনার অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সময় শহিদ মিনার, এলাকায় বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। মাদক সেবন থেকে শুরু করে ভাসমান মানুষের বর্জ্য ত্যাগের স্থানে পরিণত হয়েছে এই ঐতিহাসিক এলাকা। ফলে শহিদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
খ. স্মৃতিসৌধ
১৯৭১-মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ শহিদ হন। জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাঙালির বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
১৯৭৯ সালে সৈয়দ মাইনুল হোসেন প্রণীত নকশায় মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ সালে বিজয় দিবসের আগে কাজ সমাপ্ত হয়। সাতটি ত্রিভুজ আকৃতির মিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের। মুক্তিসংগ্রামের সাতটি পর্যায়ের ঐতিহাসিক গতি-প্রকৃতি এক প্রতীকী ভাবব্যঞ্জনায় সন্নিবেশিত হয়েছে। সেই সাতটি পর্যায় হলো যথাক্রমে- ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬-এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ।
৪৫ মিটার উঁচু’ এ সর্বোচ্চ মিনারটি জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং বাগান। স্মৃতিসৌধের চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহিদদের দশটি গণকবর। প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করলে স্মৃতিমিনারটি প্রবেশদ্বারের অক্ষ বরাবর চোখে পড়ে, কিন্তু মূল বেদিতে পৌছাতে বেশকিছু উঁচু-নিচু এলাকা, পেভমেন্ট ও একটি কৃত্রিম জলাশয়ের ওপর নির্মিত সেতু পার হয়ে যেতে হয়। এ সবকিছুই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শত বাধা-বিপত্তিকে নির্দেশ করে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান শহিদদের অসামান্য ত্যাগ ও শৌর্যের স্মৃতি হিসেবে অম্লান গৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।
গ. পুরাকীর্তি বা পুরাতন স্থাপনা: আহসান মঞ্জিল
পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী, দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনা ‘আহসান মঞ্জিল’। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ জাইয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর হলেও পূর্বে দি ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি।
আহসান মঞ্জিল এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮৫৯ সালে আর শেষ হয় ১৮৭২ সালে। ১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রবল ভূমিকম্পে পুরো আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মাণের সময় বর্তমান উঁচু গম্বুজটি সংযোজন করা হয়। একসময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ।
মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। বর্তমানে আহসান মঞ্জিলের সৌন্দর্য অবলোকন করতে দর্শনার্থীদের নিদিষ্ট মূল্যের টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও মানুষের জন্য আহসান মঞ্জিলে প্রবেশমূল্য লাগে না। ঢাকার বুকে আত্মগরিমায় দাঁড়িয়ে থাকা এই মঞ্জিল বাংলাদেশের স্থাপত্য ইতিহাসের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
ঘ. নদীর তীর
প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য হলো নদীতীর। আমার নানাবাড়ি এক প্রান্ত গ্রামে। সেখানে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাঙালি নদী। বাঙালি নদীতে খুব একটা স্রোত নেই। ছোট্ট নদীর দুপাশে দুটি গ্রাম। নদীতীরে বিকেন বেলা দাঁড়ালে অভাবনীয় সৌন্দর্য চোখে পড়ে।
এপারের মানুষ ওপারের নদীর তীরে গিয়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। নদীর তীরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাট-বাজার। গ্রামের সব মানুষ সপ্তাহে দুদিন, সেই তীরে গিয়ে বাজার করে নিয়ে আসে। দুপুর বেলা গ্রামের সবাই নদীর তীরে গিয়ে গোসল করে। ছোটো ছোটো ছেলে- মেয়েরা পাড় থেকে নদীতে লাফ দেয়, যা দেখতে খুবই ভালো লাগে। যাদের বাড়ি একান্তই নদীর তীরে তাদের জন্য অবশ্য কষ্ট হয়। কারণ অনেক সময় দেখা যায়, বন্যার পানি বেড়ে গেলে নদীর তীর ভাঙতে শুরু করে। ফলে নদীর একদম তীরবর্তী মানুষের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
নদীতীরকে কেন্দ্র করে অনেকের জীবিকা গড়ে ওঠে। যারা মাঝি তারা নদীর এক তীরের মানুষকে অন্য তীরে নিয়ে যায়। নদীতীরে অনেকে শখ কর মাছ ধরতে আসে। আবার অনেককেই দেখা যায়, মাছ ধরাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে। নদীর তীরে দাঁড়ালে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি কাজ করে। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়, জীবন এমনই এক বহমান প্রক্রিয়া। তাছাড়া নদীতীরের নির্মল ঝিরিঝিরি বাতাস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ভালো তেমন প্রশান্তিদায়ক।
অনেক সময় দেখা যায়, নদীতীরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়। সেসব মেলায় অনেক কিছু পাওয়া যায়। গোধূলির সময় নদীতীরে এক অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। সবাই ঘরে ফেরায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঝিরা তাদের নৌকাগুলো সরি সারি বেঁধে রেখে যে যার ঘরে ফিরে যায়। সারি সারি বাঁধা নৌকার রূপ অসাধারণ। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এক বিশেষ স্থান নদীতীর।
ঙ. সমুদ্রসৈকত
বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত। এটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা কক্সবাজারে অবস্থিত। প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক এই সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসে। আমারও সৌভাগ্য হয়েছিল সেখানে যাওয়ার।
এই সমুদ্রসৈকতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর ঢেউ। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শুনে পর্যটকেরা অনেক আনন্দ অনুভব করেন। সব সময় সেখানে বড়ো বড়ো ঢেউ সৃষ্টি হয় আর সেই ঢেউ অনেক জোরে জোরে ভেজানোর জন্য সমুদ্রে নামে। তাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা ঢেউয়ের সাথে যারা বড়ো বড়ো টিউব নিয়ে সমুদ্রে নামে। ঢেউয়ের সাথে সাথে তারাও উপরে ভীরে আছড়ে পড়ে। অনেক মানুষকে দেখা যায়, গা পাল্লা দিয়ে লাফ দেয়। আবার অনেককে দেখা যায়, ভেসে ওঠে।
যারা সমুদ্রে নামতে ভয় পায় অথবা নামতে চায় না তারা সমুদ্র পাড়ে বসে এর বিশালতা অনুভব করে। অনেককে দেখা যায়, পাড়ে হসে বালি দিয়ে ঘর বানায়। বিভিন্ন চিত্র তৈরি করে।
সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে আশেপাশে অনেক দোকান বসেছে। সমুদ্রের নানা প্রকার ঝিনুক, প্রবাল, শামুক, মুস্তার দোকানও আছে। যারা শৌখিন তারা সামুদ্রিক নানা ঝিনুক সংগ্রহ করে। শুঁটকি সমুদ্র পাড়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ও আকর্ষণীয় একটি বস্তু। সামুদ্রিক নানা মাছের শুঁটকি সমুদ্র পাড়ে বিক্রি হয়।
সমুদ্রসৈকত সব সময় সুখের থাকে না। খুবই ভেবেচিন্তে এখানে নামতে হয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রে নামা নিরাপদ। কিন্তু ভাটার সময় নামা খুবই বিপজ্জনক। কারণ ভাটার টানে সমুদ্রের অতলে যে কেউ বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া মাঝে মাঝে জলোচ্ছ্বাস হয়, যা তীরবর্তী মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে।
৮ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ স্পেশাল কুইজ
প্রশ্ন ১. কাকে চিত্রশিল্পী বলা হয়?
উত্তর: যাঁরা ছবি আঁকেন তাঁদের চিত্রশিল্পী বলা হয়।
প্রশ্ন ২. যাঁরা ছবি তোলেন তাঁদের কী বলা হয়?
উত্তর: যাঁরা ছবি তোলেন তাঁদের চিত্রগ্রাহক বলা হয়।
প্রশ্ন ৩. সাধারণভাবে ছবির বিষয় কী?
উত্তর: সাধারণভাবে ছবির বিষয় হলো মানুষের প্রতিকৃতি, জনজীবন, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান।
প্রশ্ন ৪. ছবির মধ্য দিয়ে কীসের প্রতিফলন ঘটে?
উত্তর: ছবির মধ্য দিয়ে চিত্রশিল্পী ও চিত্রগ্রাহকের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে।
প্রশ্ন ৫. ছবি কাদের মনে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে?
উত্তর: ছবি দর্শকের মনে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
প্রশ্ন ৬. কী দেখে দর্শকের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়?
উত্তর: ছবি দেখে দর্শকের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ৭. বিবরণমূলক ভাষায় কী উপস্থাপন করা যায়?
উত্তর : চিত্রশিল্পী ও চিত্রগ্রাহকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং দর্শকের প্রতিক্রিয়া বিবরণমূলক ভাষায় উপস্থাপন করা যায়।
প্রশ্ন ৮. মুক্তিযুদ্ধে অবদানস্বরূপ নারীদেরকে কোন উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে অবদানস্বরূপ নারীদেরকে ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৯. ছবি-১-এ পতাকা দেখতে কেমন?
উত্তর: ছবি-১-এ বাংলাদেশের পতাকাটি মানচিত্র খচিত লাল- সবুজের পতাকা।
প্রশ্ন ১০. ছবি-২ কার আঁকা?
উত্তর: ছবি-২ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা।
প্রশ্ন ১১. ছবি-২ কোন প্রেক্ষাপটে আঁকা?
উত্তর: ছবি-২ গ্রামীণ পরিবেশের প্রেক্ষাপটে আঁকা।
প্রশ্ন ১২. ছবি-২-এ কোন পেশার মানুষদেরকে দেখা যাচ্ছে?
উত্তর: ছবি-২-এ কৃষি পেশার মানুষদেরকে দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন ১৩. ছবি-২-এ সকলে কীভাবে কাজ করছে?
উত্তর: ছবি-২-এ নারী-পুরুষ সকলে মিলেমিশে কাজ করছে।
প্রশ্ন ১৪. ছবি-৩-এ কী দেখা যাচ্ছে?
উত্তর: ছবি-৩-এ নদী, লঞ্চ, নৌকা, মাঝি, নৌকার যাত্রী, ব্রিজ, পাখি, ও নদী তীরবর্তী কিছু স্থাপনা দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন ১৫. নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে কী হয়?
উত্তর: নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে নদী দূষণ হয়।
প্রশ্ন ১৬. নদী দূষণরোধে আমাদের করণীয় কী?
উত্তর: নদী দূষণরোধে আমাদের করণীয়- খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিন, প্লাস্টিক বোতল, খাবার প্যাকেট ইত্যাদি পানিতে না ফেলা এবং অন্য কোনো উপায়ে যাতে পানি দূষণ না ঘটে সে দিকে খেয়াল রাখা।
প্রশ্ন ১৭. ছবি-৪-এ কী দেখা যাচ্ছে?
উত্তর: ছবি-৪ এ নগরায়ণের দিকটি দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন ১৮. অপরিচ্ছন্ন বর্জ্য জনজীবনের জন্য কী স্বরূপ?
উত্তর: অপরিচ্ছন্ন বর্জ্য জনজীবনের জন্য অভিশাপ স্বরূপ।
আরও দেখুন: ৮ম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ প্রশ্নোত্তর
আরও দেখুন: শব্দদ্বিত্ব – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ প্রশ্নোত্তর
আরও দেখুন: বাক্য – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ প্রশ্নোত্তর
আরও দেখুন: সমোচ্চারিত ভিন্ন শব্দ – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ
আরও দেখুন: বানান ও অভিধান – ৮ম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা বিষয়ক সকল আপডেট পেতে ফলো করে রাখতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং ভিডিও ক্লাস করতে সাবক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।